নির্মাণ সামগ্রী উদ্ভিদ বাঁশের পরিচিতি, গুরুত্ব ও চাষ পদ্ধতি (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - কৃষিশিক্ষা - বনায়ন | NCTB BOOK
609

পরিচিতি: গৃহ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে বাঁশ পরিচিত। গরিবের কুটির থেকে বড় বড় অট্টালিকা তৈরিতেও বাঁশের ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের দেশের সর্বত্রই বাঁশ চাষ হয়। বাঁশ সাধারণত মোথা বা রাইজোম থেকে চাষ করা হয়। বীজ থেকেও বাঁশের চাষ হয়ে থাকে। বাঁশ সাধারণত ৫ থেকে ৭মিটার লম্বা হয়। বাঁশ খুবই শক্ত। কাঁচা বাঁশ সবুজ হয়। পরিপক্ক বাঁশ হালকা ঘিয়ে রঙের হয়। বাঁশের চিকন চিকন ডালকে কঞ্চি বলা হয়। বাঁশের পাতা চিকন ও লম্বাটে আকৃতির। বাঁশ গাছে একশত বছরে একবার ফুল ও বীজ হয়। প্রাকৃতিকভাবেও বাঁশ বাগান তৈরি হয়।

বাংলাদেশে প্রায় ২৩ রকমের বাঁশ দেখা যায়। এলাকা ভিত্তিক বাঁশ প্রধানত দুই প্রকার।

১. বন জঙ্গলের বাঁশ যেমন- মূলি, মিতিঙ্গা, ডলু, নলি তল্লা, বেতুয়া, মাকলা, এসব বাঁশের দেয়াল পাতলা।
২. গ্রামীণ বাঁশ: যেমন- উরা, বরাক, বড়ুয়া, মরাল এসব বাঁশের দেয়াল পুরু।

গুরুত্ব: বাঁশকে গরিবের কাঠ বলা হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাঁশ বিরাট ভূমিকা রাখে। গৃহ নির্মাণ থেকে শুরু করে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক ব্যবহার্য প্রায় সকল ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার রয়েছে। বাঁশ গ্রামীণ কুটির শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি, কুলা, ঝাঁপি, মাথাল প্রভৃতি তৈরি হয়। খাল পারাপারে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করা হয়। বাঁশের বাঁশি গ্রামের শিশু-কিশোরদের বাদ্যযন্ত্র। কৃষি উপকরণ যেমন লাঙ্গল, জোয়াল, আঁচড়া ও কোদাল তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার হয়। শস্য ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়। কাগজ ও রেয়ন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে শিল্প কারখানায় বাঁশ ব্যবহৃত হয়।

চাষ পদ্ধতি: বাঁশ আমাদের দেশের অতি প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী। বাংলাদেশের সর্বত্রই বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ ৩টি উপায়ে চাষ করা হয়। যথা-মোথা ও অফসেট পদ্ধতি, প্রাককঞ্চি কলম পদ্ধতি, গিঁট কলম পদ্ধতি।

১. মোথা বা অফসেট পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ: বাঁশ চাষের জন্য ১-৩ বছর বয়সী মোথা বা অফসেট সংগ্রহ করতে হয়। বাঁশের গোড়ার দিকে ৩-৪টি গিঁটসহ মাটির নিচের মোথাকে অফসেট বলে। অফসেটের জন্য নির্বাচিত বাঁশ অবশ্যই সতেজ হতে হবে। চৈত্র মাস অফসেট সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। বর্ষা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংগৃহীত অফসেট অস্থায়ী নার্সারিতে বালির বেডে লাগানো আবশ্যক। ১৫-২৫ দিনের মধ্যে অধিকাংশ অফসেট থেকে নতুন পাতা ও কুঁড়ি গজায়। এ অফসেট আষাঢ় মাসে তিনভাগ মাটি ও একভাগ গোবর দিয়ে তৈরি গর্তে লাগাতে হয়।

২. প্রাকমূল কঞ্চি কলম পদ্ধতি: বাঁশের অনেক কঞ্চির গোড়ায় প্রাকৃতিকভাবেই শিকড় গজায়। এ ধরনের শিকড় ও মোথাসহ কঞ্চিকে প্রাকমূল কঞ্চি বলে।

ফাল্গুন হতে আশ্বিন মাস পর্যন্ত সময়ে এক বছরের কম বয়সী বাঁশ থেকে করাত দিয়ে সাবধানে শিকড় ও মোথাসহ কঞ্চি কলম কেটে নিতে হবে। সংগৃহীত কলম দেড় হাত লম্বা করে কেটে বালি দিয়ে প্রস্তুত অস্থায়ী বেডে ৭-১০ সেমি গভীরে খাড়া করে বসাতে হবে। নিয়মিত দিনে ২-৩ বার পানি দিলে এক মাস পরে সতেজ চারা তৈরি হবে। পলিব্যাগে ৩:১ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণে চারাগুলো স্থানান্তর করতে হবে। এভাবে এক বছর রাখার পর কঞ্চি কলম বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে মাঠে লাগাতে হবে।

৩. গিঠ কলম পদ্ধতি: বাঁশের কান্ডকে টুকরা টুকরা করে চারা তৈরির পদ্ধতিকে গিঠ কলম পদ্ধতি বলে। ১-৩ বছরের সবল বাঁশ নির্বাচন করতে হবে। সদ্য কাটা বাঁশকে ৩ গিঠ সহ লম্বা লম্বা খণ্ডে ভাগ করতে হবে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে বিভক্ত খণ্ডগুলো সাথে সাথে অস্থায়ী বেডে সমান্তরাল ভাবে বসিয়ে দিতে হবে। নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। বাঁশের টুকরার গিঠের কুড়ি সতেজ ও অক্ষত আছে কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের দিকে অধিকাংশ গিঠ কলমে শিকড় গজাবে। বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই শিকড়সহ গিঠ কলম বেড থেকে উঠিয়ে নিয়ে মাঠে লাগাতে হবে।

বাঁশের পরিচর্যা: নতুন বাঁশঝাড়ে খরার সময় পানি সেচ দিতে হবে। মোথার গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ মোথাসহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাঁশের ঝাড়ে নতুন মাটি দিলে সুস্থ সবল নতুন বাঁশ পাওয়া যাবে।

বাঁশ সংগ্রহ: বাঁশ পরিপক্ক হতে ৩ বছর সময় লাগে। এ জন্য ঝাড় থেকে ৩ বছর বয়সী বাঁশ সংগ্রহ করতে হবে। বাঁশ গজানোর মৌসুমে কখনো বাঁশ কাটা উচিত নয়। একবারে ঝাড়ের সব পরিপক্ব বাঁশ কাটাও উচিত নয়।

কাজ: তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে মোথা পদ্ধতি, প্রাকমূলকঞ্চি কলম পদ্ধতি ও গিঠ কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ নিয়ে আলোচনা কর ও শ্রেণিতে উপস্থাপন কর (সময় ১৫ মিনিট)।

নতুন শব্দ: অফসেট পদ্ধতি, গিঠকলম পদ্ধতি, প্রাকমূলকঞ্চি পদ্ধতি

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...